রামায়ণ আমাদের জীবনের জন্য একটি পথপ্রদর্শক। এতে যে নীতিগুলো তুলে ধরা হয়েছে, তা যদি আমরা নিজের জীবনে প্রয়োগ করি, তাহলে আমাদের জীবন অনেক সমৃদ্ধ হবে। আজ আমি আপনাকে কৌশল্যা দেবীর কথা বলব, যিনি ছিলেন রামের মা এবং তাঁর চরিত্র গঠনে এক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছেন। কৌশল্যা শুধু একজন রাজমাতা নন, তিনি ছিলেন আদর্শ মা, যাঁর শিক্ষা ও স্নেহ রামের চরিত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
মাতৃত্ব ও মূল্যবোধের শিক্ষা
প্রথমেই ভাবুন, একজন মা তাঁর সন্তানের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? রামের ক্ষেত্রে কৌশল্যা ছিলেন সেই ব্যক্তিত্ব, যিনি ছোটবেলা থেকেই তাঁকে ন্যায় ও ধর্মের পথ দেখিয়েছেন। “ধর্মই শাশ্বত সত্য” — এই নীতিকে কৌশল্যা সব সময় রামের মধ্যে প্রোথিত করেছেন। যখন আপনি কৌশল্যার ভূমিকার কথা ভাবেন, তখন মনে রাখতে হবে যে, তাঁর প্রতিটি শিক্ষা রামের ন্যায়বিচার, সহনশীলতা ও দায়িত্ববোধের ভিত গড়ে তুলেছিল।
একটি উদাহরণ দেখুন, অযোধ্যা থেকে বনবাসে যাওয়ার সময় রামের সিদ্ধান্ত। কৌশল্যা রামের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিলেন এবং তাঁকে আশীর্বাদ দিয়ে বলেছিলেন: “ধর্মের পথে থেকে যারা নিজের কর্তব্য পালন করে, তাদের জন্য সবসময় বিজয় নির্ধারিত থাকে।” এই বাক্যটি শুধু রামের জন্য নয়, আমাদের জন্যও আজ বিশেষ প্রাসঙ্গিক। আপনি কি কখনো ভেবেছেন, নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আপনার মা’র শিক্ষা কীভাবে আপনাকে প্রভাবিত করে?
সহিষ্ণুতা ও নম্রতার শিক্ষাদান
কৌশল্যার আরেকটি বড় গুণ ছিল তাঁর অসীম সহিষ্ণুতা। রাজা দশরথের জীবনে অনেক কঠিন মুহূর্ত এসেছে, কিন্তু কৌশল্যা কখনোই নিজের কর্তব্য থেকে পিছপা হননি। তিনি তাঁর সহিষ্ণুতা এবং নম্রতার মাধ্যমে রামকে শিখিয়েছিলেন, কিভাবে কঠিন পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকা যায়।
বাল্মীকির রামায়ণে একটি বিশেষ অধ্যায়ে দেখা যায়, কৌশল্যা রামের সঙ্গে কথা বলছেন এবং বলছেন: “সহিষ্ণুতা একটি মহৎ গুণ, যা মানুষের চরিত্রকে উন্নত করে। তোমাকে এই গুণ রক্ষা করতেই হবে।” এই শিক্ষা রামের বনবাসে বিশেষ কাজে লেগেছিল।
তুমি নিজেও কি এমন পরিস্থিতিতে পড়েছ, যেখানে তোমার সহিষ্ণুতা পরীক্ষা করা হয়েছে? তখন কি তুমি নিজের মায়ের উপদেশকে স্মরণ করেছ?
পারিবারিক দায়িত্বের প্রতি সচেতনতা
কৌশল্যা সব সময় পারিবারিক দায়িত্বের গুরুত্ব রামকে বোঝাতেন। তিনি বলতেন: “পরিবারের সুখ আর দায়িত্ব একসঙ্গে আসে। যিনি নিজের দায়িত্ব পালন করতে জানেন, তিনিই প্রকৃত নেতা।” এই কথাগুলো শুধু রামের জন্য নয়, আপনার আর আমার মতো মানুষের জন্যও প্রাসঙ্গিক।
অযোধ্যার রাজপুত্র হওয়া সত্ত্বেও, রাম কখনোই নিজেকে পরিবারের ঊর্ধ্বে ভাবেননি। তিনি বনবাসে যাওয়ার আগে কৌশল্যার পায়ে হাত দিয়ে আশীর্বাদ নিয়েছিলেন। তাঁর এই নম্রতায় আমরা শিখি, পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ আমাদের জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কি মনে করেন না, আপনার পরিবারের প্রতি এই দায়িত্ববোধ আপনাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে?
আত্মত্যাগের মন্ত্র
কৌশল্যার শিক্ষা রামের আত্মত্যাগের মানসিকতাকে আরও শক্তিশালী করেছিল। রামের বনবাস গ্রহণ করার পেছনে কৌশল্যার শিক্ষা ও আশীর্বাদ বড় ভূমিকা পালন করেছিল। বাল্মীকির রামায়ণে একটি উক্তি আছে: “ধর্মের পথে আত্মত্যাগই প্রকৃত পূজা।” এই শিক্ষা কৌশল্যা রামকে দিয়েছিলেন, যা তিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পালন করেছেন।
আপনি কি নিজের জীবনে কখনো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন, যেখানে নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে অন্যের জন্য কিছু করতে হয়েছে? তখন কৌশল্যার মতো একজন মায়ের শিক্ষা আমাদের পথপ্রদর্শক হতে পারে।
উপসংহার
কৌশল্যার ভূমিকা রামের চরিত্র গঠনে এতটাই গভীর ছিল যে, তিনি রামকে শুধু একজন আদর্শ রাজা নয়, একজন আদর্শ মানুষ হিসেবেও গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর প্রতিটি শিক্ষা আজও আমাদের জীবনের জন্য একটি দিশারী।
আজ আমি আপনাকে একবার ভাবতে বলি, আপনি কি আপনার জীবনে কৌশল্যার মতো কোনো ব্যক্তির শিক্ষাকে সঠিকভাবে গ্রহণ করেছেন? আপনার জীবনে এমন কোনো মূল্যবোধ কি আছে, যা আপনাকে রামের মতো একজন আদর্শ মানুষ হতে সাহায্য করতে পারে?
“যতবার তুমি ধর্ম ও কর্তব্যের পথে থাকবে, ততবার তুমি কৌশল্যার শিক্ষার প্রতিচ্ছবি দেখবে।”