যখনই আমি রামায়ণের কথা ভাবি, ভরতের চরিত্র আমার হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে। আপনি কি কখনো ভেবেছেন, কীভাবে ভরত পারিবারিক ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠলেন? তার আত্মত্যাগ, ন্যায়পরায়ণতা এবং দায়িত্ববোধ শুধুমাত্র তার নিজের পরিবারের নয়, আমাদের জীবনেরও দিশারি হতে পারে। আজ আমি আপনাদের সঙ্গে এই বিষয়ের গভীরে যেতে চাই।
ভরতের চরিত্রের শক্তি: ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষার ঊর্ধ্বে থাকা
রামায়ণের কাহিনীতে আমরা দেখেছি, ভরত যখন জানতে পারেন যে কৌশল্যার ষড়যন্ত্রের কারণে রামকে চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে পাঠানো হয়েছে, তিনি তৎক্ষণাৎ এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন। তিনি রাজগদির প্রতি কোনো আকাঙ্ক্ষা দেখাননি। এই ঘটনা আমাদের শেখায়, নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে পরিবারের স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়া কতটা জরুরি।
উদাহরণ:
যখন ভরত রামের কাছে যান চিত্রকুটে, তখন তিনি বিনীতভাবে রাজগদির দায়িত্ব নিতে রামকে অনুরোধ করেন। তার এই উক্তি আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে:
“অহং রাজ্যং ন চাইক্ষে, ত্বং রাজার ভব মা চিরম্।”
(অর্থাৎ, “আমি রাজ্য চাই না; তুমি রাজা হও এবং আমাদের পথপ্রদর্শক হও।”)
পরিবারের প্রতি ভরতের দায়বদ্ধতা
আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন, ভরত কখনো নিজের সুখের কথা ভাবেননি? কৌশল্যার ষড়যন্ত্রে তিনি সুবিধা নিতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং তিনি তার মায়ের কার্যকলাপের জন্য লজ্জিত বোধ করেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে, রাম ফিরে না আসা পর্যন্ত তিনি রাজা হবেন না। এর পরিবর্তে, তিনি রামের পাদুকা সিংহাসনের উপর স্থাপন করেন এবং সেগুলিকেই রাজার প্রতীক হিসেবে সম্মান জানান।
উদাহরণ:
রামের পাদুকা নিয়ে ভরতের এই কাজ কেবলমাত্র ন্যায়বোধের নয়, পারিবারিক ঐক্যেরও প্রতীক। এটি আমাদের শেখায় যে, একতাই শক্তি এবং এই ঐক্য রক্ষা করতে আপনাকেও আত্মত্যাগ করতে হতে পারে।
ভরত এবং পরিবারের মঙ্গল চিন্তা
যখন আমি ভরতের জীবন নিয়ে ভাবি, তখন বুঝতে পারি যে তিনি শুধু একজন ভাই নন, বরং একজন নেতা যিনি পরিবারের সবার মঙ্গল চান। ভরত চেয়েছিলেন, রাম ফিরে এসে অযোধ্যার সিংহাসনে বসুন, কারণ তিনি জানতেন রামই প্রকৃত রাজা।
উদাহরণ:
তিনি বলেছিলেন:
“রামং মহাত্মানং ন যশঃ কাঞ্চিদাবধি।”
(অর্থাৎ, “রাম একজন মহাত্মা; তার মহিমা সব সময় অক্ষুণ্ণ থাকবে।”)
এই কথা থেকে আমরা শিখি যে, পরিবারের নেতৃত্ব সেই ব্যক্তির হাতে থাকা উচিত যিনি প্রকৃতপক্ষে যোগ্য।
রামায়ণ থেকে শিক্ষার প্রভাব
আপনার যদি কখনো পরিবারের মধ্যে বিভক্তি বা মতভেদ থাকে, ভরতের কাহিনী থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি। ভরত আমাদের দেখিয়েছেন, ক্ষমতা বা সম্পদ কখনো পরিবারের চেয়ে বড় হতে পারে না।
উদাহরণ:
ভরত যখন চিত্রকুটে গিয়ে রামের সঙ্গে দেখা করেন, তখন তার বিনয় এবং ন্যায়পরায়ণতা পুরো কাহিনীর মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তার আত্মত্যাগ আমাদের শেখায় যে, ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া কখনো পরিবারের মঙ্গল চিন্তার চেয়ে বড় হতে পারে না।
আপনার জন্য একটি বার্তা
আমি যদি বলি, আপনার জীবনে ভরতের মতো আদর্শ চরিত্র প্রয়োজন, তাহলে আপনি কি একমত হবেন? তিনি আমাদের শিখিয়েছেন যে, একতা এবং আত্মত্যাগ ছাড়া পরিবারের শান্তি সম্ভব নয়।
আজ, আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন দিয়ে শেষ করতে চাই:
“আপনি কি নিজের পরিবারে ভরত হতে প্রস্তুত?”
আপনার উত্তর যাই হোক, মনে রাখবেন—ভরত আমাদের জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জে একটি অনুপ্রেরণার উৎস। তাদের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা নিজেদের জীবনে শান্তি এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে পারি।