ভরত ও রামের সম্পর্ক কি ভাইয়ের মধ্যে একতা শেখায়?

আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন, কীভাবে দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক শুধুমাত্র ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধ দিয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে? রামায়ণের ভরত ও রামের সম্পর্ক এমনই এক উদাহরণ, যা প্রতিটি ভাইয়ের জন্য এক অনুপ্রেরণা। তাদের সম্পর্ক আমাদের শেখায় কীভাবে পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী রাখা যায়।

রামের ত্যাগ এবং ভরতের একাত্মতা

রামের চরিত্রটি এমন একজন ব্যক্তিত্বের প্রতীক, যিনি কর্তব্যের জন্য নিজের সুখ ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। রামের ১৪ বছরের বনবাসের ঘটনাটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু ভেবে দেখুন, ভরত কী করলেন এই ঘটনায়? রামের অনুপস্থিতিতে, রাজা দশরথের মৃত্যুর পর, ভরত রাজত্ব পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। কিন্তু তিনি কি সেই সুযোগ নিলেন? না।

ভরত রামের প্রতি তার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেখিয়েছিলেন এইভাবে যে, তিনি রামের পাদুকা (খড়ম) রাজ সিংহাসনে বসিয়ে বললেন, “এই রাজ্য রামের, আমি শুধুমাত্র এর রক্ষক।”

রামায়ণের একটি অংশে উল্লেখ আছে:

“ধর্মে স্থিতং সত্যধৃতং চ রাজানং রাঘবং বেদ্মি।”

অর্থাৎ, ভরত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে রাজ্য পরিচালনা করার অধিকার শুধুমাত্র রামেরই। এই ঘটনাটি কি আপনাকে এই শিক্ষা দেয় না যে, ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস সম্পর্কের ভিত্তি?

পারিবারিক সম্পর্কের গভীরতা

আপনি কি কখনও আপনার ভাইয়ের জন্য এমন কিছু করেছেন যা আপনার ব্যক্তিগত সুখকে ছেড়ে দেওয়ার মতো বড়? ভরত ঠিক সেটাই করেছিলেন। ভরত যখন চিত্রকূটে রামের কাছে গিয়েছিলেন তাকে ফিরিয়ে আনতে, তখন সেই মুহূর্তে তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল একদম পরিষ্কার। তিনি রামের চরণে মাথা রেখে বলেছিলেন:

“অহং ত্বামানয়ে রাম রাজধানীং প্রত্যনুজ্ঞাপয়।”

অর্থাৎ, “আমি তোমাকে রাজধানে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি, এই রাজ্য তোমার।”

এই দৃঢ়তা কি আপনার মনে ভ্রাতৃত্বের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে না?

ছোট ছোট উদাহরণে বড় শিক্ষা

ভরত ও রামের সম্পর্ক শুধু বড় বড় ঘটনাতেই সীমাবদ্ধ নয়। ছোট ছোট বিষয়েও আমরা তাদের মধ্যে একতার নজির দেখতে পাই। যেমন:

  • ভরত ও রামের সংলাপ: যখন ভরত চিত্রকূটে রামের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তখন তাদের কথোপকথন এতটাই আন্তরিক ছিল যে তা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার গভীরতা প্রকাশ করেছিল।
  • কৌশল্যার প্রতি ভরতের স্নেহ: ভরত কখনোই তার সৎ মায়েদের প্রতি বিদ্বেষ দেখাননি, বরং কৌশল্যা মাতার প্রতি সর্বদা সম্মান দেখিয়েছেন।
  • রামের বনবাসের সময় ভরতের জীবনযাত্রা: ভরত নিজেও রাজকীয় জীবন ত্যাগ করে রামের মতো তপস্যার জীবনযাপন করেছেন।

রামায়ণ থেকে উদাহরণ

রামায়ণে এমন অনেক উদ্ধৃতি আছে যা এই দুই ভাইয়ের সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশ করে। যেমন:

  • রামের কথা:

“ভ্রাতা চ রামস্য সাধর্ম্যতঃ পিতৃসমঃ।”

অর্থাৎ, ভরত রামের কাছে পিতার মতো ছিলেন।

  • ভরতের প্রতিজ্ঞা:

“নিবোধত মম স্নেহং ভাইরিভাবং ন কালয়ে।”

অর্থাৎ, ভরত কখনোই রামের প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব পোষণ করেননি।

  • মন্ত্রীর কথা:

“এতদ্ব্যাহ ভরতস্য হৃদয়ং রাঘব স্নেহনম।”

অর্থাৎ, ভরতের হৃদয় রামের প্রতি অগাধ স্নেহে ভরা।

আমাদের জীবনে প্রাসঙ্গিকতা

আপনার যদি ভাই থাকে, তাহলে আপনি এই সম্পর্ক থেকে কী শিখতে পারেন? ভরত ও রামের সম্পর্ক আমাদের শেখায় যে, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আজকের সমাজে, যেখানে অনেক সময় ভাইদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ হয়, সেখানে এই সম্পর্ক আমাদের একতার মূল্য বোঝায়।

আপনি কি কখনও ভেবেছেন, কীভাবে আপনি আপনার ভাইয়ের প্রতি আরও উদার হতে পারেন? হয়তো আপনাকে ভরতের মতো ত্যাগ করতে হবে না, কিন্তু ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেও আপনি একতা প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।

শেষ কথা

রাম ও ভরতের সম্পর্ক শুধুমাত্র একটি গল্প নয়; এটি এক জীবন্ত শিক্ষার উৎস। আপনি যদি এই সম্পর্ক থেকে একটি শিক্ষাও নিতে পারেন, তবে আপনার জীবন আরও সুন্দর হয়ে উঠবে। আজ থেকেই ভাবুন, আপনি কীভাবে আপনার ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top