রামায়ণ আমাদের জীবনের এক অনন্য শিক্ষক। এর প্রতিটি অধ্যায় আমাদের জীবনের নানা দিক সম্পর্কে গভীর শিক্ষা দেয়। পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উদাহরণগুলিও রামায়ণের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক। যদি তোমরা জীবনকে আরও উন্নত করতে চাও, রামায়ণের এই শিক্ষা তোমাদের দিশা দেখাবে। আজ আমি তোমাদের জানাব কীভাবে রামায়ণে পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা ও কর্তব্যের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
পিতার আদেশে রামের বনবাস
রামচন্দ্রের জীবন থেকেই আমরা পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধার চরম উদাহরণ পাই। রাজা দশরথ যখন কৈকেয়ীর অনুরোধে রামকে ১৪ বছরের বনবাসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন, তখন রাম বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে তা মেনে নেন। রাম বলেছিলেন,
“পিতার আদেশই আমার ধর্ম। তাঁর ইচ্ছাই আমার পথ।”
এই বাক্য আমাদের শেখায়, পিতামাতার প্রতি কর্তব্য পালনে কখনও পিছু হটা উচিত নয়। এমনকি নিজের আরামের থেকেও পিতামাতার ইচ্ছাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। রাম যখন অযোধ্যার সিংহাসনের যোগ্য ছিলেন, তখনও তিনি বনবাসে যেতে একটুও আপত্তি করেননি। এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিখি?
তুমি কি কখনও ভেবেছ, তোমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তোমার পিতামাতার ইচ্ছাকে কতটা গুরুত্ব দাও? রামের মতো পিতার কথা মানতে কি আমরা প্রস্তুত?
মাতার আদেশে ভরত অযোধ্যায় ফিরে আসেন
কৈকেয়ী যখন ভরতকে রামের পরিবর্তে রাজা হওয়ার আদেশ দেন, ভরত তা প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু মাতা কৈকেয়ীর প্রতি ভরতের শ্রদ্ধা এতটাই দৃঢ় ছিল যে তিনি অযোধ্যায় ফিরে আসেন। তিনি রাজা না হয়ে রামের খড়মকে সিংহাসনে বসিয়ে তার প্রতিনিধিত্ব করার সিদ্ধান্ত নেন। ভরত বলেছিলেন,
“আমি মায়ের ইচ্ছাকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু আমি রামের প্রতি আমার কর্তব্য ভুলব না।”
এই কাহিনি আমাদের শেখায়, পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন মানেই অন্ধভাবে তাঁদের আদেশ মানা নয়। বরং, তাঁদের ভুল সিদ্ধান্তকে সঠিক পথে পরিচালনা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য।
শবরী: পিতৃতুল্য গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা
শবরীর গল্পও পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধার একটি অনন্য উদাহরণ। শবরী নিজের গুরু মাতঙ্গ রিষির প্রতি এতটাই শ্রদ্ধাশীল ছিলেন যে গুরুর মৃত্যুর পরও তিনি প্রতিদিন গুরুর আশীর্বাদের অপেক্ষায় রইলেন। রাম যখন তাঁর কুটিরে পৌঁছান, তখন শবরী তাঁকে বলেছিলেন,
“গুরু আজ্ঞা অনুসারেই আমি এখানে অপেক্ষা করছি।”
এই ঘটনাটি দেখায়, পিতামাতার মতো গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাঁদের নির্দেশ পালন আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত।
তুমি কি গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা রাখো? তাঁদের নির্দেশের প্রতি মনোযোগ দাও?
দশরথের মৃত্যুঃ পুত্রবিয়োগের বেদনা
রামের বনবাসের কারণে রাজা দশরথ ভীষণ দুঃখিত হন এবং শেষ পর্যন্ত সেই দুঃখেই মৃত্যু বরণ করেন। দশরথের শেষ কথা ছিল,
“রাম! তুমি কোথায়? তোমার মুখ দেখার ইচ্ছা অপূর্ণ রয়ে গেল।”
এখানে আমরা দেখি, সন্তানদের প্রতি পিতামাতার ভালোবাসা কত গভীর। সন্তানরা যদি পিতামাতার ইচ্ছা অনুযায়ী না চলে, তবে তাঁদের মনে কতটা কষ্ট হয়।
তুমি কি কখনও ভেবেছ, তোমার পিতামাতার ইচ্ছা পূরণ করতে না পারলে তাঁদের কতটা কষ্ট হয়?
সীতার পিতৃব্রত পালন
সীতার চরিত্রেও পিতৃব্রত পালনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। সীতা যখন স্বয়ম্বর সভায় রামের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তখন তিনি তাঁর পিতা জনকের ইচ্ছা পূরণ করেন। জনক বলেছিলেন,
“সীতা সেই পুরুষকে বিবাহ করবে, যে শিবের ধনুক ভাঙতে পারবে।”
এই ঘটনাটি পিতার আদেশের প্রতি সীতার শ্রদ্ধার উদাহরণ।
উপসংহার
রামায়ণ আমাদের শেখায়, পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা শুধু কর্তব্য নয়, এটি আমাদের জীবনধর্ম। পিতামাতার আশীর্বাদ ছাড়া জীবনে প্রকৃত উন্নতি সম্ভব নয়। রামের মতো যদি আমরা তাঁদের ইচ্ছাকে সম্মান করতে শিখি, তাহলে আমাদের জীবন সত্যিই সুন্দর হয়ে উঠবে।