আমরা যখন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেই, তখন অনেক সময় বড়দের পরামর্শকে অবহেলা করি। কিন্তু এই অভ্যাস কি আমাদের জন্য ভালো? রামায়ণের গল্পগুলি আমাদের শেখায় যে সিনিয়রদের কথা না শুনলে কী ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে। এই লেখায় আমি এবং আপনি একসাথে এই বিষয়ে গভীরে যাবো এবং রামায়ণ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ তুলে ধরবো।
বড়দের অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শের গুরুত্ব
আমাদের জীবনে বড়রা যে ভূমিকা পালন করেন, তা অপরিসীম। তাদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, এবং বিচক্ষণতা আমাদের ভুল পথ থেকে রক্ষা করতে পারে। কিন্তু আমরা কি সবসময় এই পরামর্শকে গুরুত্ব দিই? যদি না দিই, তার ফল কী হতে পারে তা রামায়ণে স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে।
রামায়ণের উদাহরণ: দশরথ এবং কৈকেয়ীর কথা
আমাদের প্রথম উদাহরণ দশরথ মহারাজ এবং কৈকেয়ীর কাহিনি। কৈকেয়ী নিজের স্বার্থে দশরথকে দুই প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দেন – রামের বনবাস এবং ভরতের রাজ্যাভিষেক। দশরথ মহারাজ যদি নিজের প্রবীণ মন্ত্রীদের পরামর্শ শুনতেন, তাহলে হয়তো এই বিপর্যয় এড়ানো যেত। কিন্তু তিনি একা সিদ্ধান্ত নিলেন এবং এর ফলে শুধু রামের বনবাসই নয়, তার নিজের জীবনও শেষ হয়ে গেল।
রামায়ণে বলা হয়েছে, “ধর্মং শরণং গচ্ছ—ধর্মই জীবনের সত্য পথ। কিন্তু ধর্মের পথে চলতে হলে বড়দের পরামর্শ গ্রহণ করাই শ্রেয়।”
রামের বনবাস: শ্রীরামের মেনে চলার উদাহরণ
শ্রীরাম অন্যরকম উদাহরণ। তিনি তার গুরু এবং পিতার কথা মেনে বনবাসে যান। এই সিদ্ধান্ত তার জন্য কঠিন ছিল, কিন্তু তিনি জানতেন বড়দের কথা মেনে চলাই ধর্মের পথ। যদি রাম তার পিতার কথা না শুনতেন, তাহলে হয়তো রামের চরিত্র আজ আমাদের কাছে এত মহান মনে হতো না।
রামায়ণে বলা হয়েছে, “গুরুজনানাং বচনং ধর্মস্য মূলং।” – গুরুজনদের বাণীই ধর্মের মূল।
রাবণের পরিণতি: অহংকার এবং অবাধ্যতার ফল
রাবণের কাহিনিতেও আমরা সিনিয়রদের কথা না শোনার ভয়াবহ পরিণতি দেখতে পাই। রাবণের ভাই বিভীষণ তাকে সতর্ক করেছিলেন – সীতাকে মুক্তি দাও এবং শ্রীরামের সাথে যুদ্ধ করো না। কিন্তু রাবণ তার অহংকারে মত্ত হয়ে এই পরামর্শ উপেক্ষা করেন। এর ফল হলো, পুরো লঙ্কা ধ্বংস এবং রাবণের মৃত্যু।
রামায়ণের এই অংশটি আমাদের শেখায় যে, “অধর্মো ফলমাশুতে।” – অধর্মের ফল দ্রুতই প্রাপ্ত হয়।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা
আমার জীবনে এমন অনেক সময় এসেছে, যখন আমি বড়দের পরামর্শকে অবহেলা করেছি এবং পরে তার খারাপ ফল পেয়েছি। একবার আমি একা একটি বড় ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমার বাবার পরামর্শ ছাড়া। ফলাফল হলো, আমি প্রচুর ক্ষতির মুখে পড়লাম। পরে বাবার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইলে তিনি বললেন, “আমি তো আগেই বলেছিলাম।”
আমার এই অভিজ্ঞতা আমাকে শেখালো, সিনিয়রদের অভিজ্ঞতা এবং পরামর্শের মূল্য কতটা।
আপনি কী করবেন?
আপনার জীবনে এমন কোনো পরিস্থিতি কি এসেছে, যেখানে বড়দের কথা না শুনে সমস্যায় পড়েছেন? যদি এসে থাকে, তাহলে এবার তাদের কথা শুনুন। রামায়ণের এই শিক্ষাগুলি আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে পারলে আমরা অনেক বড় ভুল এড়াতে পারি।
একটি চিন্তাপ্রদ প্রশ্ন
আমাদের জীবনে বড়দের উপদেশ গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। শ্রীরাম আমাদের দেখিয়েছেন কিভাবে গুরুজনদের কথা মেনে চলা উচিত।
আপনি কি রামের মতো বড়দের কথা শুনতে প্রস্তুত? নাকি রাবণের মতো অবাধ্য থেকে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনবেন? সিদ্ধান্ত কিন্তু আপনার হাতে।