রামায়ণ শুধুমাত্র দেবদেবীর গল্প নয়, এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি সমস্যার জন্য একটি গাইডবুক। বিশ্বাস করুন বা না করুন, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, তার সবই এই মহাকাব্যে লুকিয়ে আছে! তাহলে আসুন, দেখি সেই ১০টি মারাত্মক ভুল, যা করলে আপনার সম্পর্ক ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে।
১. অতিরিক্ত সন্দেহ করা, ‘মাতা সীতা’ থেকে শিক্ষা নিন
কোনো কিছুতেই ভরসা নেই? প্রেমিক/স্বামী একটু দেরি করলেই সন্দেহ? এভাবে চললে সম্পর্ক ভেঙে যেতে বাধ্য! মনে পড়ে, রামের প্রতি সন্দেহের কারণে সীতাকে বারবার প্রমাণ দিতে হয়েছে? আপনারও যদি প্রতিটি কথার প্রমাণ চাইবার স্বভাব থাকে, তাহলে সম্পর্ক বেশিদিন টিকবে না!
২. অন্যদের কথায় বেশি কান দেওয়া, ‘রামের বনবাস’ এর গল্প
পরিবার-বন্ধুরা যাই বলুক, সম্পর্কের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। কৌশল্যা যদি শুধুমাত্র রাজার কথায় না চলতেন, তবে রাম বনবাসে যেতেন না। তাই অন্যদের কথায় প্রভাবিত হয়ে আপনার সম্পর্ক নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন না!
৩. অহংকারকে বড় করে দেখা, ‘রাবণের পতন’ থেকে শিক্ষা নিন
আপনার কি সবসময় মনে হয় আপনি ঠিক? আপনি কখনোই ভুল করতে পারেন না? তবে সাবধান! অহংকারের কারণেই রাবণের পতন হয়েছিল। একবার ‘সরি’ বললে আপনার মানহানি হবে না, বরং সম্পর্ক আরো মজবুত হবে!
৪. সম্পর্কে স্বার্থপরতা দেখানো, ‘ভারত ও রামের মধ্যে পার্থক্য’
একজন সত্যিকারের পার্টনার কখনো নিজের স্বার্থই বড় করে দেখে না। যেমন, রামকে বনবাসে পাঠানোর পর ভারত নিজের স্বার্থে রাজ্য দখল করেননি, বরং রামের খড়মকে সিংহাসনে বসিয়েছিলেন। তাই, শুধুমাত্র নিজের সুবিধার কথা ভাবলে সম্পর্ক টিকবে না!
৫. অযথা ঝগড়া করা, ‘লক্ষ্মণ ও সীতা’র বনবাসের ঘটনা
ঝগড়া সব সম্পর্কেই হয়, কিন্তু অকারণে অতিরিক্ত ঝগড়া করলে সম্পর্ক নষ্ট হবে। সীতা যদি লক্ষ্মণের কথা শুনতেন এবং স্বর্ণমৃগের মোহে না পড়তেন, তবে অনেক বিপদ এড়ানো যেত!
৬. বিশ্বাসের অভাব, ‘সীতা অগ্নিপরীক্ষা’র শিক্ষা
একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি হল বিশ্বাস। রাম যদি সত্যিই সীতাকে বিশ্বাস করতেন, তবে তাঁকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হত না। তাই নিজের পার্টনারের প্রতি বিশ্বাস রাখুন, নইলে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে।
৭. সম্পর্কে অপরিসীম প্রত্যাশা রাখা, ‘কেকেয়ীর ভুল সিদ্ধান্ত’
আপনার কি মনে হয়, আপনার সঙ্গী সবসময় আপনাকে রাজরানির মতো রাখবে? তাহলে এই ধারণা পরিবর্তন করুন। কেকেয়ী তার প্রত্যাশার জন্য রাজাকে বাধ্য করেছিলেন রামকে বনবাসে পাঠাতে, যার ফলে পুরো রাজ্যের দুর্ভোগ শুরু হয়েছিল।
৮. অন্য কারও জন্য নিজের মানুষকে অবহেলা করা, ‘মন্দোদরীর বেদনা’
রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী সবসময় তাঁকে সতর্ক করেছিলেন, কিন্তু রাবণ কখনো তাঁর কথা শুনতেন না। ফলাফল? সর্বনাশ! তাই, বন্ধু-বান্ধব বা কাজের জন্য নিজের সঙ্গীকে অবহেলা করবেন না। সম্পর্ক রাখার জন্য সময় দিতে হয়!
৯. নিজের ভুল স্বীকার না করা, ‘কৌশল্যা বনাম কেকেয়ী’
একটা সম্পর্ক তখনই সুন্দর হয়, যখন দুইজনই নিজের ভুল বুঝতে শেখে। কেকেয়ী যদি স্বীকার করতেন যে তিনি ভুল করেছেন, তাহলে রাজপরিবার এত কষ্ট পেত না। নিজের ভুল বুঝতে শেখা জরুরি!
১০. ক্ষমা না করা, ‘লক্ষ্মণ-রামের বন্ধুত্ব’
সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইলে ক্ষমা করতে শিখতে হবে। লক্ষ্মণ যদি রামের উপর রাগ করে তাঁকে ছেড়ে চলে যেতেন, তবে কি ভাইয়ের সম্পর্ক এত শক্তিশালী থাকত? কখনো কখনো ইগো ছেড়ে স্যরি বলা প্রয়োজন!
শেষ কথা
রামায়ণের গল্পগুলো কেবল অতীতের জন্য নয়, বরং আজকের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্যও দারুণ শিক্ষা দেয়! এই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিন, আর সম্পর্কের উন্নতি ঘটান।