বন্ধুত্ব জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদগুলোর একটি! কিন্তু ভুল বন্ধুর পাল্লায় পড়লে? উফ! জীবন হয়ে উঠতে পারে একেবারে দুঃস্বপ্ন! বিশ্বাসঘাতকতা, ঈর্ষা, প্রতারণা, এসব থেকে নিজেকে বাঁচাতে চাইলে আপনার দরকার রামায়ণের চিরন্তন জ্ঞান। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন! রাম, লক্ষ্মণ, হনুমান, এমনকি রাবণের জীবনের গল্পেও লুকিয়ে আছে বন্ধুত্বের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। তাই, চোখ-কান খোলা রাখুন! ভুল বন্ধুদের চিনতে হলে রামায়ণের এই ১০টি সতর্কবার্তা মনে রাখুন।
১. অন্ধ বিশ্বাসের আগে যাচাই করুন (রামের বিভীষণ গ্রহণ বনাম রাবণের কুম্ভকর্ণকে উপেক্ষা)
রাম বিভীষণকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন কারণ তিনি সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। কিন্তু রাবণ তার ভাই কুম্ভকর্ণের পরামর্শ উপেক্ষা করে নিজের ধ্বংস ডেকে এনেছিল। তাই, বন্ধুত্বের আগে যাচাই করুন, আপনার বন্ধু সত্যিই আপনাকে ভালো চায়, নাকি নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করছে!
২. যে আপনাকে ছোট করে, সে বন্ধু নয় (কৈকেয়ীর দাসী মন্ত্রীর চক্রান্ত)
বন্ধুত্ব মানে সমান সম্মান! রামায়ণে দেখুন, মন্ত্রিণী মন্দোদরী কৌশলে কৈকেয়ীকে ভুল বুঝিয়ে রামের বনবাস নিশ্চিত করেছিল। এমন ‘ফ্রেন্ড’দের থেকে সাবধান! যারা আপনাকে সবসময় ছোট করে, নেতিবাচক কথা বলে বা আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দিতে চায়, তাদের দূরে সরিয়ে দিন।
৩. কঠিন সময়ে পাশে থাকে না? তার মানে সে সত্যিকারের বন্ধু নয়! (সুগ্রীব বনাম বালী)
সুগ্রীব যখন দুর্দশায় পড়েছিলেন, তখন তার তথাকথিত ভাই বালী তাকে সাহায্য করেনি, বরং তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রকৃত বন্ধুরা শুধু আনন্দের সময়ই থাকে না, কঠিন সময়েও পাশে থাকে। দেখুন তো, আপনার বন্ধুরা আপনাকে প্রয়োজনের সময় সাহায্য করে তো?
৪. আত্মসম্মান বিসর্জন দেবেন না (সীতা ও রাবণের মিথ্যা বন্ধুত্ব)
রাবণ সীতাকে বন্ধুত্বের ফাঁদে ফেলে তাকে লঙ্কায় নিয়ে গিয়েছিল। যে বন্ধুত্ব আপনার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, আপনাকে চাপে ফেলে বা আপনার আত্মসম্মানহানি করে, সেটা আসলেই বন্ধুত্ব? একদম নয়!
৫. গোপন শত্রু চেনার ক্ষমতা রাখুন (রামের সাথে বিভীষণের বন্ধুত্ব)
অনেক সময় শত্রুর ভেতরেই সত্যিকারের বন্ধু লুকিয়ে থাকে। বিভীষণ তার ভাই রাবণের বিপক্ষে গিয়ে রামের বন্ধু হয়েছিল, কারণ সে সত্যের পক্ষে ছিল। তাই, কখনও কখনও খারাপ বন্ধুকে বিদায় জানিয়ে প্রকৃত বন্ধুর হাতে হাত রাখাই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত!
৬. বন্ধুত্ব মানে সবসময় হ্যাঁ বলা নয়! (হনুমানের সততা)
হনুমান কখনো রামের প্রতি অন্ধ আনুগত্য দেখায়নি, বরং যখন দরকার পড়েছে, তিনি সঠিক পরামর্শ দিয়েছেন। যারা কেবল আপনার পক্ষে কথা বলে, কিন্তু সত্যিটা বলে না, তারা প্রকৃত বন্ধু নয়। ভুল হলে বলার মতো সাহস যার নেই, সে আসলে বন্ধু নয়!
৭. কথার ফুলঝুরি নয়, কাজে পরিচয় (রামের প্রতি হনুমানের নিষ্ঠা)
কিছু মানুষ বন্ধুত্বের নামে শুধু কথা বলে, কিন্তু কাজের বেলায় গায়েব! হনুমান কিন্তু কেবল কথা বলেননি, রামকে খুঁজতে লঙ্কা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন! তাই, শুধু মিষ্টি কথায় ভুলবেন না, দেখুন, সত্যিকার অর্থে কে আপনাকে সাহায্য করে!
৮. নেতিবাচক বন্ধুর প্রভাব থেকে সাবধান (রাবণের সভাসদদের ভুল পরামর্শ)
রাবণের দরবারে সবাই তার গুণগান গাইতো, সত্য কথা বলার সাহস কারও ছিল না। এর ফলাফল? পুরো লঙ্কা ধ্বংস! যদি আপনার বন্ধুদের মধ্যে কেউ সবসময় আপনাকে ভুল পথে চালিত করে, অন্যদের বিরুদ্ধে উসকায়, বা শুধু আপনার হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলায়, তাহলে সাবধান!
৯. লোভী বন্ধু সর্বনাশের মূল (কেকয়ী ও মন্ত্রী মন্ত্রিণীর ষড়যন্ত্র)
বন্ধুত্বে স্বার্থ থাকতেই পারে, কিন্তু শুধুই স্বার্থ যেখানে, সেখানে সতর্ক হোন! রামের সিংহাসন পাওয়ার লোভে কৈকেয়ী তার ছেলে ভরতের জন্য অন্যায় করেছিল। লোভী বন্ধুরা সবসময় নিজের স্বার্থ দেখবে, আপনাকে নয়।
১০. সত্যিকারের বন্ধু হারালে, তারা ফিরে আসে (ভরত ও রামের সম্পর্ক)
ভরত রামের অনুপস্থিতিতে সিংহাসনে বসেননি, বরং তার জন্য রাজত্ব আগলে রেখেছিলেন। প্রকৃত বন্ধুত্ব এমনই, সময় ও দূরত্ব যাই থাকুক না কেন, ভালোবাসা ও সম্মান থেকে যায়!
শেষ কথা: আপনি কোন বন্ধুত্ব বেছে নেবেন?
রামায়ণের গল্প থেকে এই ১০টি শিক্ষা মাথায় রাখলে, ভুল বন্ধুদের চিনতে পারবেন সহজেই! আপনার চারপাশের মানুষগুলোকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। তারা কি হনুমানের মতো বিশ্বস্ত, নাকি রাবণের মতো ধ্বংসাত্মক?